-->
927V0MJku1OcBLTuD7lkELe7Mk4OHfuDB8LuA1nI
Bookmark
বই রিভিউ, বই সংক্রান্ত নানান আলোচনা, সাহিত্য সমালোচনা, সাহিত্যিক এবং বিখ্যাত ব্যক্তিদের জীবনীসহ বিশ্বের আলোচিত-সমালোচিত নানান বিষয়ে Page Pleasure Books প্রকাশিত হয়ে থাকে। পাঠকের জ্ঞানের জগৎ সমৃদ্ধ করাকে একটি সামাজিক দায়িত্ব বলে মনে করি। ‘Page Pleasure Books’ সেই দায়িত্ববোধ থেকেই নেয়া একটি প্রয়াস। বইয়ে বইয়ে সয়লাব হোক ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল।

সুন্দরবনের বাঘ ও বাঙালি পর্যটকরা

ছোটবেলায় আমাদের প্রত্যেকেরই অন্তত দুটি মামা থাকে। একজনের নাম চাঁদ, আরেকজন বাঘ। দু’জনের মধ্যে বেশ মিল আছে। তারা দেখতে বেশ নজরকাড়া, এমনকি রাতেই তাদের কাজ থাকে বেশি। তবে স্বভাবগত দিক থেকে প্রথমজন যতটা হাসি-খুশি-আমোদি; অন্যজন ঠিক উল্টো! গুরুগম্ভীর আর মেজাজি। চাঁদ মামাকে অবলোকন করে দু-চার লাইন কবিতা লেখা খুব সহজ, তবে বাঘ মামাকে দেখা কিন্তু জীবন-মরণের ব্যাপার। অবশ্য চিড়িয়াখানার অলস মামাদের বিষয়টা ভিন্ন।


আমি কখনও বাঘের খোঁজে সুন্দরবন যাইনি। তবে খুব আরামসে তিন/চারদিন কাটানোর লোভে বার বার যাওয়া হয়েছে লবণ-পানির বনটাতে। ট্যুর গাইড হেলাল ভাই প্রায়ই মজা করে বলতেন, আপনি বাঘকে দেখলে, বাঘও কিন্তু আপনাকে দেখবে! তাই সুন্দরবন এসে বাঘ না দেখাই ভালো। তবে ভাগ্যে থাকলে খুব দূর থেকে দেখতে পাবেন। এতে ‘রথ দেখা কলা বেচা’ দুটোই হবে।


সুন্দরবনের ট্যুরিস্ট জাহাজগুলো ওঠার পরই ট্যুর গাইডরা সবাইকে নিয়ে ছোটখাটো সভার আয়োজন করেন। নিয়মকানুন আর কী কী দেখানো হবে, সেসব নিয়েই মূলত ওই সভা। তখন স্বভাবত দুই-একজন বাঘ দেখা নিয় প্রশ্ন করেন; আর তাদের উত্তর থাকে হেলাল ভাইয়ের মতোই! কেউ কেউ দেখার নিশ্চয়তা দেন হাজার ভাগের এক ভাগ। ট্যুর গাইডরা পই পই করে সবাইকে বুঝিয়ে বলেন যে সবসময় একসাথে থাকতে হবে। এই বনের সব জায়গায় বাঘ এবং বিষাক্ত প্রাণী আছে। বিচ্ছিন্নভাবে থাকলে যেকোনো মুহুর্তে যেকোনো দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তবে কে শোনে কার কথা!

ছোট্ট বানর থেকে শুরু করে সশস্ত্র বনদস্যু—বাঘ যদি হুকুম দেয় সবাই সুন্দরবনের এক ঘাটে জল খেতেও রাজি। এতটাই আতঙ্ক! তবে সুন্দরবন ঘুরতে যাওয়া এক শ্রেণির পর্যটকরা বলেন- ‘ধুর, সুন্দরবনে এখন বাঘ আছে নাকি! সব চোরা কারবারীরা মেরে ফেলছে!’ তবে সবশেষ বাঘ শুমারি অনুযায়ী, সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে বাঘের সংখ্যা ১১৪টি; এর মধ্যে ৩০টির মতো পুরুষ বাঘ থাকার কথা।


সুন্দরবনের গিয়ে ‘বাঘ ভয় পায় না’ বলে বুলি আওড়ানো লোকের অভাব নেই। বিশেষ সঙ্গে ট্যুর গ্রুপে দুই-চারজন তরুণী থাকলে এমন লোকের সংখ্যা বেড়ে যায়! বুকে খুব জোর দিয়ে বলেন, ‘আমরা হলাম সাহসী জাতি, বাঙালি। বাঘের কথা বলে আমাদেরকে মৃত্যুর ভয় দেখাও? এই বাঘ-টাগ আমাদের দেখলে লেজ গুটিয়ে পালাবে!’ তবে আমার বিশ্বাস, তারাই সবচেয়ে বেশি বাঘের ভয়ে থাকে।


একবার সুন্দরবনের ট্যুরিস্ট গাইড সুন্দর আলীর মুখে শুনেছিলাম বাঘের সঙ্গে লড়াইয়ের গল্প। ঠিক লড়াই নয়, লুকোচুরি। খুব ভোরে, হারবাড়িয়ায় বসে আছেন, সুন্দর আলী ভাইসহ আরও তিনজন বসে আছেন পুকুর পাড়ে। বন বিভাগের কয়েকজন কর্মকর্তা অফিসের ভেতরে। চারদিক কুয়াচ্ছন্ন। কোনো পর্যটক নেই। তখনই একজনের চোখ পড়লো মিঠা পানির পুকুরের আরেকপাশে। বাঘ, পানি খাচ্ছে! ঘটনাটা এরকম, তাদরে কয়েকশ’ ফুট সামনে বাঘ দাঁড়ানো। কারও হাতে কোনো রাইফেল নেই, সবই অফিসে। গাইডরা চুপি চুপি পিছু হটতে লাগলো। কিন্তু তখন বাঘটাও এগোতে লাগলো।


তারপর? সুন্দর আলী বললেন, আমরা শুয়ে পড়লাম। বাঘটা এত কাছে ছিল যে, পালিয়ে যাব কোথায়! বাঘের চেয়ে অফিসের দূরত্ব বেশি। কুয়াশায় তাদের মাটিতে শোয়া দেখে ভালোমতো বুঝতে না পেরে মাথাটা কয়েকবার উঁচু/কাত করে দেখছিলো বাঘটা। তারপর আর বাঘটা এগোয়নি, হয়তো বিস্মিত হয়েছিল যে মানুষগুলো উধাও হলো কীভাবে ভেবে! তবে সুন্দর আলীদের ভাগ্য ভালো না হলে, বাঘ মামা কিন্তু খুব মজা করে নাশতাটা সেরে নিতো।


তবে কিছু কিছু পর্যটকের কপাল বেশ ভালো। চোখের সামনে বাঘ দেখে অসংখ্যবার ফিরে এসেছেন। যেমন তালাশ শাহনেওয়াজ ভাইকে অনেকে ‘বাঘ কপাইল্লা’ বলেন। সুন্দরবনে খালে-জঙ্গলে এই অসাধারণ মানুষটা চারবার বাঘের সামনে পড়ে এই কুখ্যাতি পেয়েছি। তবে তিনি প্রথমবারের পর কখনোই বাঘের সঙ্গে দেখা করতে চাননি।


সুন্দরবনে আমার অসংখ্যবার যাওয়া হয়েছে। সুস্বাদু খাবারের লোভ, নেটোর্কের বাইরে বসে নিচেকে চেনা কিংবা ছোট ছোট খালগুলোর প্রেম—এসব কারণেই কিন্তু আমি সুন্দরবন যাই। কখনও চাই না বাঘের সামনে যাই, তবে দূর থেকে দেখার ইচ্ছে আছে। সুন্দরবন আসলে প্রকৃতির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়ার জায়গা; এ কারণেই হয়তো এখানকার অনেকের সাথেই আমার খুব আন্তরিক সম্পর্ক হয়ে গেছে। শুধু বাঘ ছাড়া

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন