ছেলেটা সারাদিন দুষ্টুমি করে। এখন এইখানে আবার একটু পরে ওইখানে। সারাদিন কি যে করে! আজ ওকে বকাঝকা করেছি। কারণ গ্লাস ভেঙ্গে ফেলেছে।
বুঝিয়ে বলতে পারতাম। কিন্তু মনের অজান্তেই বকাবকি করে ফেলেছি। এখন খারাপ লাগছে। অভিমান করে বন্ধুদের সাথে খেলতে গেছে।
বিকেলের আগে মনে হয়না ফিরবে। যাওয়ার আগে বলে গেছে আমি আর আসবো না।
প্রায় এরকম করে। আমি কিছু মনে করিনি।
আজ ওকে সারপ্রাইজ দিব, ওর প্রিয় ডিম পিঠা দিয়ে। দেখে অনেক খুশি হবে।
আমি সব গুছিয়ে রাখলাম। দেখে ছেলেটা অনেক খুশি হবে। কখন আসবে আমি অপেক্ষা করছি।
দেখতে দেখতে বিকেল হয়ে এলো। এতক্ষণে চলে আসবার কথা। এখন আমার একটু ভয় হতে লাগলো। ওর বাবাকে দেখতে পাঠালাম। কোথায় গেল ছেলেটা? কেনো যে বকতে গেলাম!
এরপর সন্ধ্যা হয়ে এলো। তবুও আসছে না। আমি কান্না করতে লাগলাম। ওর বাবাও গেল আসছে না, মনে হয় ওকে খুঁজছে। অনেকক্ষণ খোজাঁর পরে ওর বাবা এলেন। ওর বাবা আমাকে বলতে লাগলেন, বুঝিয়ে বলতে পারোনা। এখন নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে। আমি কাঁদছি, একটু পরে কে যেনো ডাক দিল, মা। আমার প্রান ফিরে এলো। একটা থাপ্পড় মেরে জড়িয়ে ধররাম। আমি কাঁদছি ও কাঁদছে।
ওর বাবা বললো কোথায় গিয়েছিলি? ও কাঁদো কাঁদো গলায় বললো, ছাদে।
ওর বাবা আবার বললো, মার কান্না শুনিসনি? বলল শুনেছি।
তাহলে লুকিয়ে ছিলি কেনো? উত্তরে কিছু বললো না। আমি ওর বাবাকে আর প্রশ্ন করতে বারণ করলাম।
আমি বললাম ডিম পিঠা খাবি না? বললো খাবে।
আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম, আমাকে ছেড়ে আবার চলে যাবি না তো? সে বললো, বকলে আবার চলে যাব কিন্তু।
এতক্ষণ যে গল্পটা বললাম, এটা মার ডায়েরিতে পেলাম। সাল লেখা আছে ১৯৯৬ আর এখন ২০২২। আমার মনে নেই এটা কবেকার কথা। আরো অনেক লেখা পেলাম, আমার দুষ্টুমি নিয়ে। যখন মা বকতেন আমি মনে করতাম এগুলো কোনো দুষ্টুমি হলো! কিন্তু এখন আমি নিজেই আমার ছেলেকে ছোটোখাটো বিষয়ে বকি। যাই হোক, এখন মনে হয় যত খুশী বকো বা মারো, তবুও ফিরে আসো। এখন মা আর নেই। একটা দূর্ঘটনায় চলে গেছেন।
ঠিক এভাবেই প্রত্যেক মা তার সন্তানকে ভালোবাসে। তাই একটা কথা বলি, পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ভালোবাসা হচ্ছে মা এবং সন্তানের ভালোবাসা।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন