নতুন একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যদি দৈনিক ৩০ মিনিট একটি ভালো বইয়ের পেছনে সময় দেন, তাহলে তা আপনার জীবনে কয়েক বছর আয়ু যোগ করে দিতে পারে। ৩ হাজার ৬৩৫ জন মানুষের ওপর তাদের স্বাস্থ্য ও পড়ার অভ্যাসের ওপর ভিত্তি করে এই গবেষণা চালায় ইয়েল ইউনিভার্সিটির গবেষকরা। গবেষণায় দেখা গেছে, বইপোকাদের মারা যাওয়ার আশঙ্কা অন্যদের থেকে ২০ শতাংশ কম। ‘সোস্যাল সায়েন্স অ্যান্ড মেডিসিন’ জার্নালে এ গবেষণাটি ছাপানো হয়। ইয়েল ইউনিভার্সিটির গবেষকরা দেখতে চেয়েছিলেন, কীভাবে বই ও ম্যাগাজিন পড়া আমাদের বয়সকালের ওপর প্রভাব ফেলে। তারা খেয়াল করেছেন, টেলিভিশন দেখলে মৃত্যুঝুঁকি বাড়ে।
আমরা কোনো বই পড়লে সে বইয়ের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের মস্তিষ্কে বিভিন্ন রকম থিম ও ক্যারেক্টার তৈরি হয়। তারা দেখেছেন, ‘পত্রিকা ও ম্যাগাজিনের চেয়ে বই মানুষকে আরো গভীরভাবে ভাবায় এবং জ্ঞানের পরিধি বড় করে।’ দেখা গেছে, যারা একেবারেই বই পড়ে না, তাদের চেয়ে যারা সপ্তাহে অন্তত সাড়ে ৩ ঘণ্টা বই পড়ে, তাদের মৃত্যুঝুঁকি ১৭ শতাংশ কম। যারা এর থেকেও বেশি বই পড়েন, তাদের ক্ষেত্রে এ হার ২৩ শতাংশ নিচে নেমে আসে। যারা বইয়ের চেয়ে পত্রিকা ও ম্যাগাজিন পড়তে বেশি পছন্দ করেন, তারা যদি সপ্তাহে ৭ ঘণ্টা এগুলো পড়েন, তবে তাদের মৃত্যুহার অন্যদের থেকে ১১ শতাংশ কমে যাবে।
যারা বেশি পড়েন, তাদের জ্ঞানের পরিধিও বেশি, তাই তারা বেশি বাঁচবেন, এমন ধারণা নাকচ করে দেয়ার জন্যই মূলত গবেষণাকাজটি শুরু করেছিলেন গবেষকরা। কিন্তু ফল হয়েছে তার উল্টো। গবেষকরা দেখেছেন, বই পড়ার অভ্যাস মানুষের মস্তিষ্কে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। তারা জানান, ‘বই পড়লে প্রাকৃতিকভাবেই মস্তিষ্কে জ্ঞানের পরিধি বাড়তে থাকে, নিজ থেকে আলাদাভাবে চেষ্টা করার দরকার পড়ে না।’ একজন বইপড়ুয়া মানুষ যে বই পড়ে না, তার থেকে গড়ে ২৩ মাস বেশি বাঁচে। নারী, পুরুষ, ধনী, গরিব নির্বিশেষে সবার ক্ষেত্রেই এ তথ্যটি সত্য।
গবেষকরা দেখেছেন, ৬৫ বছরের বেশি বয়সী মানুষ দিনে গড়ে প্রায় সাড়ে ৪ ঘণ্টা টেলিভিশন দেখে সময় কাটায়। তাদের এ অবসরে যদি টেলিভিশনের জায়গায় সঙ্গী হিসেবে বই থাকে, তবে তা হয়তো তাদের আয়ু বাড়াতে সহায়তা করবে। আর হ্যাঁ, যারা এরই মধ্যে পত্রিকা ও ম্যাগাজিন পড়ে সময় কাটান, তাদের এসবের পাশাপাশি কিছু গল্পের বই বা উপন্যাস পড়তে বলুন। এ গবেষণা বইপোকাদের জন্য আসলেও অনেক বড় একটি সুখবর। এখন থেকে বই পড়ে নতুন সব তথ্য তো জানতে পারবেনই, সঙ্গে সঙ্গে আরো কয়েক বছর বই পড়ার জন্য অতিরিক্ত আয়ুও হয়তো পেতে পারেন!
বইপত্র পড়তে ভালোবাসেন? তবে আপনার জন্য সুখবর আছে: বেশি দিন বাঁচবেন। যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক বলছেন, পড়ুয়া লোকজনের মৃত্যুঝুঁকি অন্যদের চেয়ে ২০ শতাংশ কম হয়ে থাকে।
সোশ্যাল সায়েন্স অ্যান্ড মেডিসিন সাময়িকীর অনলাইন সংস্করণে এ গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়, খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ এবং নিয়মিত শারীরিক ব্যায়ামের মতো বই পড়ার অভ্যাসও মানুষের শরীর ও মনকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। ফলে সুযোগ হয় বেশি দিন বেঁচে থাকার।
৫০ বছরের বেশি বয়সী ৩ হাজার ৬৩৫ জনের ওপর ১২ বছর ধরে গবেষণা চালান বিজ্ঞানীরা। তাঁরা ওই মানুষদের তিনটি দলে ভাগ করেন। প্রথম দলটি একেবারেই বই পড়ে না, দ্বিতীয় দলটি সপ্তাহে প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা পড়ে আর তৃতীয় দলটি সপ্তাহে সাড়ে তিন ঘণ্টার বেশি সময় বই পড়ে সময় কাটায়। ফলাফল বেশ চমকপ্রদ: বইবিমুখ মানুষদের চেয়ে পড়ুয়ারা প্রায় দুই বছর বেশি বাঁচতে পারেন। শিক্ষা, আয়, স্বাস্থ্যের অবস্থাসহ পরিবর্তনশীল বিভিন্ন সূচকের ভিত্তিতে পরিচালিত ওই গবেষণায় দেখা যায়, সপ্তাহে সাড়ে তিন ঘণ্টার বেশি সময় বই পড়ে অভ্যস্ত দলটির সদস্যদের মৃত্যুঝুঁকি ওই গবেষণাকালীন বইবিমুখ দলটির সদস্যদের চেয়ে ২৩ শতাংশ কম ছিল। আর একই পর্যায়ে সপ্তাহে সাড়ে তিন ঘণ্টার কম সময় বই পড়ে কাটানো দলের সদস্যদের ক্ষেত্রে মৃত্যুঝুঁকি বইবিমুখ দলের সদস্যদের চেয়ে ১৭ শতাংশ কম ছিল।
বই কীভাবে মানুষের সুস্থতা ও আয়ুর ওপর এমন প্রভাব ফেলে, তা অস্পষ্ট। এ-সংক্রান্ত কার্যকারণ ওই গবেষণায় দেখানো হয়নি। তবে সাম্প্রতিক অন্যান্য গবেষণা বলছে, উপন্যাস পড়লে মস্তিষ্কের সংযোগ সামর্থ্য ও সহানুভূতি সাধারণত বাড়ে। পাশাপাশি বই মানুষের মধ্যে দয়া, বিনয় ও সৃজনশীলতার বিকাশে সাহায্য করে।
ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের মহামারি-সংক্রান্ত বিদ্যার অধ্যাপক এবং বেকা আর লেভি বলেন, দিনে আধা ঘণ্টা পড়লেও উপকার পাওয়া যায়। এ রকম অভ্যাস থাকলে একদম বইবিমুখ লোকদের চেয়ে কিছুদিন বেশি বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বাড়ে। তবে এ ক্ষেত্রে ব্যক্তির শিক্ষা, সম্পদ, স্বাস্থ্য এবং অন্যান্য বিষয়ও বিবেচনায় নিতে হবে।
ভালো খবর হলো, সামগ্রিকভাবে বই বিক্রি গত কয়েক বছরে বেড়েছে। নিয়েলসন বুকস্ক্যানের হিসাবে যুক্তরাষ্ট্রে গত বছর অন্তত ৬৫ কোটি ২০ লাখ বই বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে কাগজে ছাপা বই ও ইলেকট্রনিক বই—দুই-ই রয়েছে। বিশ্ব সংস্কৃতি সূচক বলছে, সবচেয়ে বেশি বই পড়ার অভ্যাস আছে যথাক্রমে ভারত, থাইল্যান্ড ও চীনে।
মার্কিন মুলুকের ওয়েল ইউনিভার্সিটি সমীক্ষাটি করে কিছুদিন আগে। ৩,৬৩৫জন ৫০ ঊর্ধ্ব ব্যক্তির উপর পরীক্ষা চলানো হয়। তখনই সামনে আসে এই তথ্য। সকলকে তিনটি বিভাগে ভাগ করেন গবেষকরা।
১] যাঁরা একেবারেই বই পড়েন না,
২] সপ্তাহে অন্তত সাড়ে ৩ ঘণ্টা বই পড়েন যাঁরা,
৩] সপ্তাহে সাড়ে ৩ ঘণ্টার বেশি বই পড়েন যাঁরা।
বইমেলা ২০১৯ বেস্ট সেলার বই গুলো সহজেই সংগ্রহ করুন রকমারি ডট কম থেকে !
ফলাফলে জানা যায়, যাঁরা একেবারেই বই পড়েন না বা সপ্তাহে অন্তত সাড়ে ৩ ঘণ্টা বই পড়েন, তাঁদের আয়ু তুলনামূলক কম। অন্যদিকে, যাঁরা সপ্তাহে সাড়ে ৩ ঘণ্টার বেশি বই পড়েন, তাঁরা অনেকদিন বাঁচেন। আয়ু বেড়ে যায় ২৩ শতাংশ।
আরও বেশ কিছু তথ্য বেরিয়ে আসে এই সমীক্ষায়। জানা যায়, পুরুষদের তুলনায় মহিলা বইপ্রেমীদের সংখ্যা বেশি। কলেজে পড়েন যাঁরা, সেই সংখ্যাটিও নেহাত কম নয়। উচ্চবিত্ত পরিবারের সদস্যদের মধ্যেও বই পড়ার রেওয়াজ তুলনামূলক বেশি।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন