-->
927V0MJku1OcBLTuD7lkELe7Mk4OHfuDB8LuA1nI
Bookmark
বই রিভিউ, বই সংক্রান্ত নানান আলোচনা, সাহিত্য সমালোচনা, সাহিত্যিক এবং বিখ্যাত ব্যক্তিদের জীবনীসহ বিশ্বের আলোচিত-সমালোচিত নানান বিষয়ে Page Pleasure Books প্রকাশিত হয়ে থাকে। পাঠকের জ্ঞানের জগৎ সমৃদ্ধ করাকে একটি সামাজিক দায়িত্ব বলে মনে করি। ‘Page Pleasure Books’ সেই দায়িত্ববোধ থেকেই নেয়া একটি প্রয়াস। বইয়ে বইয়ে সয়লাব হোক ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল।

মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও সমুদ্রের জল থেকে ফিরলেন নাবিক

বুদ্ধিমান প্রাণি হিসেবে পৃথিবীর স্থলভাগের ক্ষমতা মানুষের হাতে চলে গেলেও, জলভাগ এখনও অনেকটাই মানুষের ক্ষমতার বাইরে। দুলতে থাকা ঢেউগুলোর দিকে তাকালে বোঝার উপায় নেই, কয়েক মুহুর্তে কী ধ্বংসলীলা চালাতে পারে উত্তাল সমুদ্র। এসব ভয় ও আশঙ্কাকে পেছনে ফেলে তাও কিছু মানুষ ছুটে বেড়িয়েছে সমুদ্র থেকে সমুদ্রে। বহুদিনের অভিজ্ঞতাকে সাথে নিয়ে রহস্যময় সমুদ্রের সঙ্গে বসবাস করার অভিজ্ঞতা শুনিয়েছেন আব্দুল্লাহ মারুফ।


জীবনে বহুবার এই প্রশ্ন শুনেছি ‘সমুদ্রের জীবনটা কেমন?’ দশটা-পাঁচটা অফিস করে যেই জীবন কাটানো হয়, সমুদ্রের জীবনটাকে সেই চোখ দিয়ে দেখলে হবে না। তবে কেউ এই প্রশ্নটা করলে আমি উত্তরটা অন্যভাবে দেই। সেটা কী রকম? বলছি।


আপনি যখন ব্যবসা করেন কিংবা চাকরি করেন, আপনার যাত্রাটা অনেকটা একরোখা। মানে প্রতিদিন সকালে আপনি জানেন, সারাদিনের জার্নিটা আসলে কোথায়। আপনার উপরের বসও একজনই থাকেন। বলতে পারেন আমাদের জীবনটা অনেক স্থির। কিন্তু সমুদ্রের ক্ষেত্রে এটা উল্টো। সমুদ্রের জার্নিটা কখনও স্থির থাকে না। আপনি আপনার মত সকাল, দুপুর, রাতের খাবার খাচ্ছেন, ডিউটি পালন করছেন কিন্তু আপনি এক জায়গায় বসে নেই। আপনাকে নিয়ে সমুদ্র চলমান। তাছাড়া প্রতিদিনই একজন বসের আন্ডারে কাজ করতে হচ্ছে তাও নয়। প্রতিদিনই যেন নতুন বস, নতুন ইঞ্জিনিয়ার। প্রতিদিনই নতুন করে তাদের সঙ্গে পরিচিত হওয়া।


সবসময় যে এক দেশের বা এক এলাকার মানুষ আসেন তাও কিন্তু নয়। ভিন্ন সংস্কৃতির ভিন্ন দেশের মানুষের সঙ্গে ওঠাবসা। যেন বৈচিত্র্যময় ছোটখাটো একটা সমাজ নিয়েই চলছি প্রতিনিয়ত।


তবে সবচেয়ে মজার বিষয় কী জানেন? আপনি চাকরি বা অফিস করলে যেই একঘেয়েমি জীবনটা যাপন করেন, সেখানে কিন্তু কারণে অকারণে আপনার অনেক মানুষের সঙ্গে কথা বলতে হয়। মিটিং করতে গিয়ে, আত্মীয়তার খাতিরে এমনকি চা খেতে গিয়েও আপনার সঙ্গে অনেক মানুষের দেখা হয়। কিন্তু সমুদ্রে তা হওয়ার সুযোগ নেই। সেই বিশ কিংবা বাইশ জন নিয়েই ছুটে চলা। প্রতিদিন তাদেরকে দেখেই সকাল হচ্ছে, তাদের সঙ্গেই থাকতে হচ্ছে। উত্তরটা একটু বড় হয়ে গেছে জানি, তবে সমুদ্রের জীবনটা আমি এভাবেই ব্যখ্যা করতে পছন্দ করি।


এরপরেই যেই প্রশ্নটা সবার মাথায় আসে, তা হলো- সমুদ্রে চলাকালীন সময়ে জাহাজে কার ক্ষমতা সবচেয়ে বেশি? এই প্রশ্নটা মজার তবে উত্তরটা খুব একটা অপিরিচত নয়। সবকিছু হিসেব করে ক্ষমতার আসনে থাকেন- ক্যাপ্টেন। তার আন্ডারে বেশ কিছু আলাদা ডিপার্টমেন্ট থাকে। ধরুণ ইঞ্জিন ডিপার্টমেন্ট, যারা জাহাজের কারিগরি বিষয়গুলো পরিচালনা করেন। আবার থাকে গ্যালি ডিপার্টমেন্ট, মানে যারা রান্না বান্না করেন আর কি।


অবশ্য রান্না বান্নার কথা শুনলেই আমাদের বাঙালীদের চোখ বড় বড় হয়ে যায়। ওখানে কী খাওয়া হয়, কীভাবে রান্না হয় এসব প্রশ্ন আসতেই থাকে। তবে সবচেয়ে মজার প্রশ্নটা হলো ‘ভাই এতদিন সমুদ্রর মধ্যে থাকেন, ওখানে তো দোকান নাই! এত খাবার কই পান’। ইয়ে মানে, ঠিক এভাবেই যে সবাই প্রশ্নটা করে তা না, তবে ভাবটা এমনই। সহজ হিসেব, যাত্রা শুরুতেই একসাথে খাবার নিয়ে নেয়া হয় সাধারণত। সমুদ্রে মাঝে আটকে পরা, প্রতিকুল প্রতিবেশের কারণে দেরি হওয়া সহ অনেক সেফটির কথা ভেবে অতিরিক্ত খাবার নেয়া হয়। যদি যাত্রাটা বিশ দিনের হয়, তবে হয়তোবা এক থেকে দেড় মাসের খাবার সংরক্ষণ করা হয়।


তবে সমুদ্রের জীবন নিয়ে আরেকটি দিক আপনাদের সামনে বলতে চাই। সেটি হলো- স্বাস্থ্য। আমাদের দেশের মত সমুদ্রে তো মোড়ে মোড়ে ফার্মেসি নেই। এমনকি ডাক্তারও নেই জাহাজে। তাই আমরাই আমাদের ডাক্তার। ফায়ার সেফটি, সাঁতারের সঙ্গে সঙ্গে নিজের অসুখেরও অনেক টনিক শিখে নিতে হয় আমাদের। তবে এখানেই শেষ না। কারণ জানেনই তো, স্বাস্থ্য শুধু শারিরীক না; বরং মানসিক স্বাস্থ্য বলেও একটা ব্যাপার আছে। তাই এদিকটাতেও আমাদের নজর রাখতে হয়। কে কেমন ব্যবহার করছে, কারও আচার আচরণে বড় ধরণের পরিবর্তন হচ্ছে কিনা এদিকটাও আমাদের খেয়াল রাখতে হয়। অর্থাৎ নিজেরাই নিজেদের দিকে নজর রাখি। সমুদ্র যাত্রার এই দিকটা আমাকে শেখায়- তোমার জীবনে সবচেয়ে বড় সঙ্গী তুমিই!


তবে প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে সমুদ্র দেখার মধ্যে আসলে ওতটা অ্যাডভেঞ্চার নেই। বরং কিছুটা বোরিংনেস আছে। প্রতিদিন ঘুম থেকে আপনি দেখছেন আপনার চারপাশে শুধু পানি আর পানি। উমম, খুব একটা ইন্টারেস্টিং নয়। তবে সমুদ্রে টানা কয়েক মাসের বড় একটা জার্নি শেষে যখন দেশে ফিরে আসি, সত্যি বলতে কিছুদিন পরই আবার সমুদ্রকে মিস করা শুরু করি। ব্যাপারটা অনেকটা, কনফিউজিং আর কি। সমুদ্রে থাকলে মনে হয়, পানির মধ্যে আর কত? আবার দেশে ফিরলে মনে হয় সমুদ্র আমায় ডাকছে।


তবে সবশেষে একটা বিষয় বলি। যারা সমুদ্রকে ঘিরে ক্যারিয়ার গড়তে চায় অর্থাৎ মেরিন ক্যারিয়ার গড়তে গেলে সর্বপ্রথমই সবার মত করে চিন্তা ভাবনা করা বাদ দিতে হবে। জীবনটাকে অন্যভাবে ভাবতে হবে। আশেপাশের মানুষের অনেক ধরণের মতামত অনেক ধরণের চিন্তা আপনাকে প্রভাবিত করতে পারে। কিন্তু জীবনটা তো আপনারই, তাই না?


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন