-->
927V0MJku1OcBLTuD7lkELe7Mk4OHfuDB8LuA1nI
Bookmark
বই রিভিউ, বই সংক্রান্ত নানান আলোচনা, সাহিত্য সমালোচনা, সাহিত্যিক এবং বিখ্যাত ব্যক্তিদের জীবনীসহ বিশ্বের আলোচিত-সমালোচিত নানান বিষয়ে Page Pleasure Books প্রকাশিত হয়ে থাকে। পাঠকের জ্ঞানের জগৎ সমৃদ্ধ করাকে একটি সামাজিক দায়িত্ব বলে মনে করি। ‘Page Pleasure Books’ সেই দায়িত্ববোধ থেকেই নেয়া একটি প্রয়াস। বইয়ে বইয়ে সয়লাব হোক ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল।

নিকোলা টেসলা, এক ভাগ্যবিড়ম্বিত তড়িৎ জাদুকর!

টেসলার জীবন, জন্ম থেকে মৃত্যু
১৮৭০ সাল। ক্রোয়েশিয়ার এক স্কুলে গণিত ক্লাস চলছে। আজকের বিষয় ইন্টিগ্রেশন। বেশ কটা ক্লাসের পর আজকে কঠিন কঠিন ইন্টিগ্রেশন শুরু। বোর্ডে কতগুলো অঙ্ক লিখে শিক্ষক ফিরলেন ছাত্ররা অঙ্ক করছে কিনা দেখতে। সবাই মনোযোগ দিয়ে করছে।

কিন্তু একজন বসেই আছে। স্যার তার দিকে এগিয়ে গেলেন। বললেন, “তুমি করছ না কেন?’

১৪ বছরের সেই ছেলেটি বোর্ডের সব অঙ্কের উত্তর বলে গেল। স্যার ভাবলেন ছেলেটা হয়তো কোনোভাবে উত্তরগুলো মুখস্থ করে এসেছে। তিনি বানিয়ে কয়েকটি অঙ্ক দিলেন। ছেলেটি এবারও সব অঙ্কের নির্ভুল উত্তর বলে দিল! একবারও খাতা-কলম হাতে নিল না! শিক্ষক মহাশয় বুঝতে পারলেন, এই ছেলে ভয়ংকর মেধাবী।

ছেলেটির নাম নিকোলা টেসলা। আজকের IEEE সংগঠনের এক সময়ের ভাইস প্রেসিডেন্ট!


টেসলা কি ইউরোপীয়? নাকি আমেরিকান? 
নিকোলা টেসলার লেখা উল্টেপাল্টে দেখলে আপনার মনে হবে, লোকটি বুঝি কড়া আমেরিকান। তাঁর শেষ দিককার লেখাগুলো পড়লে আপনি কোনোদিন ভাবতেও পারবেন না, এই ভদ্রলোক আদতে একজন ইউরোপীয়। সত্যি বলতে, টেসলার জন্ম অস্ট্রীয় সাম্রাজ্যে, জাতিগত দিক দিয়ে তিনি একজন সার্বিয়ান এবং পরবর্তী জীবনে একজন আমেরিকান।

বাবার ইচ্ছে পূরণ হলো না… 
১৮৫৬ সালের ১০ জুলাই টেসলার জন্ম, ক্রোয়েশিয়ার এক গ্রামে। বাবা ছিলেন একজন ধর্মযাজক। নানাও ছিলেন তাই।

পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন চতুর্থ। বড় ভাই মারা গিয়েছিলেন ঘোড়া থেকে পড়ে গিয়ে। তাঁর বাবার ইচ্ছে ছিল, নিকোলাও বড় হয়ে যাজক হবেন তাঁর মতো। ছোট থেকেই তাঁকে সেটা নিয়ে চাপ দিতেন। কিন্তু নিকোলা সেটা চাইতেন না, একদমই না।

চার বছরের পড়া তিন বছরেই শেষ! 
১৮৬১ সালে প্রাইমারি স্কুলে ভর্তি হন টেসলা। শেখেন জার্মান ভাষা, গণিত আর ধর্মতত্ত্ব। ১৮৭০ সালে হাইস্কুলে পড়ছিলেন তিনি। একটু আগে বলা সেই ইন্টিগ্রেশনের ঘটনাটি সেখানেই ঘটে। তখনই তাঁর আসল মেধা ধরা পড়ে। চার বছরের পড়া তিন বছরেই শেষ করে গ্র্যাজুয়েট হয়ে গেলেন তিনি ১৮৭৩ সালে।

উল্টো বাবাই পূরণ করলেন ছেলের ইচ্ছে 
সে বছরই টেসলা ফিরে গেলেন নিজের গ্রামে। এসে কলেরার প্রকোপে পড়লেন। খুব ভয়ংকর অবস্থা। নয় মাস ছিলেন শয্যাশায়ী। কয়েকবার মৃত্যুর কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিলেন। তাঁর বাবা অসহায় হয়ে কথা দিলেন, সুস্থ হলে তাঁকে সবচেয়ে ভালাে ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুলে পড়তে পাঠাবেন। আর বলবেন না যাজক হতে। টেসলা সুস্থ হয়ে উঠলেন একসময়। বাবা পরে কথা রেখেছিলেন বটে!

ফিকশন পাঠ ভূমিকা রেখেছিল তাঁর আত্মোন্নয়নে
১৮৭৪ সালে টেসলা সেনাবাহিনীতে ভর্তি হওয়া থেকে বাঁচতে পালিয়ে গেলেন। পাহাড়ে পাহাড়ে ঘুরলেন কিছুদিন। টেসলা পরে বলেছিলেন, প্রকৃতির সঙ্গে এই নৈকট্যটা তাঁর বড় দরকার ছিল। বসে বসে মার্ক টোয়েন পড়তেন তিনি। বড় হয়ে টোয়েন সাহেবের সঙ্গে তাঁর দেখাও হয়েছিল।

ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুলে সব বিষয়ে ছিল সর্বোচ্চ গ্রেড 
১৮৭৫ সালে টেসলা ভর্তি হলেন অস্ট্রিয়ান পলিটেকনিকে। ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুলে পড়ার স্বপ্ন পূরণ হলাে তাঁর। প্রথম বর্ষে তিনি একটা লেকচারও মিস করেননি। সব বিষয়ে ছিল সর্বোচ্চ গ্রেড। ডিনের কাছ থেকে লেটার পেয়েছিলেন তাঁর বাবা, ‘আপনার ছেলে প্রথম শ্রেণির স্টার।’

প্রতিদিন রাত ৩টা থেকে ১১টা পর্যন্ত টানা খাটতেন। (কিংবা ভিন্ন কোনাে রুটিন। মােদ্দা কথা, বড় একটা সময়।) ছুটির দিনেও বিশ্রাম নিতেন না। ১৮৭৯ সালে বাবা মারা যাওয়ার পর বাবার পুরােনাে চিঠি ঘাঁটতে গিয়ে তিনি দেখলেন, সেখানে তাঁর প্রফেসরদের চিঠি আছে, “আপনার ছেলেকে এখনই স্কুল থেকে সরিয়ে নিন। না হলে খাটতে খাটতে মারাই যাবে।”

কিন্তু শেষ পর্যন্ত ড্রপ আউট! 
দ্বিতীয় বর্ষে ‘ক্যুরেটর দরকার কি দরকার না, সেটা নিয়ে তিনি তর্কে জড়িয়ে পড়েন প্রফেসরের সঙ্গে। সে বছরই জুয়ায় আসক্ত হয়ে পড়েন নিকোলা টেসলা। স্কলারশিপ বাতিল হয়ে যায় তাঁর। তৃতীয় বর্ষে তিনি তাঁর সব সম্পদ জুয়ায় উড়িয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েন। কিন্তু জুয়া খেলেই সব আবার ফেরত আনেন। তাঁর মতাে কোনাে মানুষের জন্য ব্যাপারটা একটু অবিশ্বাস্যই শােনায়। পরে তাঁকে বিলিয়ার্ড খেলার নেশা পেয়ে বসে।

পরীক্ষার সময় আসার পর টেসলা আবিষ্কার করেন, তিনি কিছুই পড়েননি। পরীক্ষার আগে তিনি ছুটি বাড়াতে চাইলেন। কিন্তু তাঁর দাবি অগ্রাহ্য করা হলাে। তিনি গ্র্যাজুয়েশন শেষ করতেই পারলেন না। শেষ সেমিস্টারে কোনাে গ্রেডই তাঁর ভাগ্যে জুটল না। হয়ে গেলেন একজন ড্রপআউট!

বাড়ি থেকে পালিয়ে…… 
১৮৭৮ সালের ডিসেম্বরে টেসলা চলে গেলেন নিজের পরিবারের সঙ্গে সব রকম সম্পর্ক ছিন্ন করে; তারা যেন ঘুণাক্ষরেও টের না পায়, টেসলা এখন একজন ড্রপআউট। স্লোভেনিয়ায় চলে গেলেন তিনি, সেখানে মাসে ৬০ ফ্লোরিনের বিনিময়ে ড্রাফটসম্যানের কাজ করতেন। আর বাকি সময়টা কার্ড খেলে কাটাতেন রাস্তায় রাস্তায় মানুষের সঙ্গে।

১৮৭৯ সালের মার্চে তাঁর বাবা তাঁকে সেখানে খুঁজে পেলেন, হাত জোড় করলেন বাড়ি ফিরে আসতে, কিন্তু টেসলা ফিরলেন না। এ সময়টা তিনি নার্ভাস ব্রেকডাউনে পড়েন। ১৮৭৯ সালের শেষ দিকেই অবশ্য তিনি ফিরে আসেন, আর তাঁর বাবাও মারা যান স্ট্রোক করে। সেখানে নিজের পুরােনাে স্কুলে পড়াতে লাগলেন টেসলা।

পড়াশোনায় ইতি এবং ক্যারিয়ারের শুরু 
১৮৮০ সালে চাচাদের টাকায় প্রাগ শহরে পড়তে যান তিনি। কিন্তু দেরি হয়ে গিয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ে রেজিস্ট্রেশনের সময় শেষ হয়ে যায়। তাছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বলা ছিল, গ্রিক আর চেক ভাষা জানতে হবে। তিনি এ দুটো তখনাে পারতেন না। ১৮৮১ সালে বুদাপেস্টে চলে যান টেসলা। সেখানে এক টেলিগ্রাফ কোম্পানিতে কাজ করতে লাগলেন। এখানেই টেসলা তাঁর প্রথম বৈজ্ঞানিক কাজ করেন—টেলিফোনের অ্যামপ্লিফায়ার নিখুঁত করে তােলেন তিনি, কিন্তু কোনাে দিন সেটার পেটেন্ট নেননি।

এডিসনের কোম্পানিতে কাজের শুরু, অতঃপর… 
১৮৮৪ সালে থমাস আলভা এডিসনের কোম্পানিতে কাজ করতে যান। স্বয়ং এডিসন তাঁকে নিয়ােগ দেন, তবে সেটা নিউইয়র্ক শহরে। প্রথম প্রথম তাঁর কাজ ছিল সাধারণ ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং। এরপর ধীরে ধীরে কঠিন সব সমস্যা আসতে থকে।

তাঁকে কাজ দেওয়া হয় ডিসি জেনারেটর পুনর্নকশা করতে। ১৮৮৫ সালে টেসলা বললেন, “আমি এটা আরও ভালাে করে বানাতে পারব। এডিসন বললেন, ‘পারলে তােমাকে ৫০ হাজার ডলার দেব।’ মাসের পর মাস পরিশ্রম করার পর টেসলা আসলেই কাজটি পারলেন।

এডিসনকে তখন পেমেন্ট দিতে বললেন। হাসিমুখে এডিসনের উত্তর ছিল, “আরে, তুমি দেখি আমেরিকান ঠাট্টা বােঝােই না।’ টেসলার বেতন সপ্তাহে ১৮ ডলার থেকে ২৮ ডলার করে দেন এডিসন, এই ছিল তাঁর পুরস্কার। কিন্তু টেসলা সেটা নিতে অস্বীকৃতি জানান। সেই কোম্পানি থেকে বিদায় নেন তিনি নিজেই।

গুড বাই টু দ্য এডিশন মেশিন ওয়ার্কস 
টেসলা অবশ্য তাঁর আত্মজীবনীতে লিখেছেন, “এডিসন মেশিন ওয়ার্কস কোম্পানির নিউইয়র্ক শাখার ম্যানেজার তাঁকে ৫০ হাজার ডলার দেওয়ার কথা বলেছিলেন। যদিও এই গল্পটি টেসলা ও এডিসনকে নিয়ে প্রচলিত। তবে টেসলার ভাষ্যে পাওয়া এই ম্যানেজার যে এডিসন নন, তা বলা যায়। সেক্ষেত্রে এডিসন নন, টেসলার এ সমস্যা হয়েছিল এই ম্যানেজারের সঙ্গে।

মার্ক জে. সিফারের লেখা টেসলার এক জীবনীগ্রন্থ থেকে জানা যায়, আগেও তাঁকে নানা সময়ে বােনাস দেওয়ার কথা বলে দেওয়া হয়নি। টেসলার ডায়েরিতে এ বিষয়ে শুধু একটি বাক্য লেখা আছে— “গুড বাই টু দ্য এডিসন মেশিন ওয়ার্কস।”

নিজের কোম্পানি প্রতিষ্ঠা এবং … 
১৮৮৬ সালে তিনি নিজের ‘টেসলা ইলেকট্রিক লাইট অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করলেন। সেখানে তিনি ডায়নামাে ইলেকট্রিক মেশিন ক্যুটেটর বানালেন, যেটা ছিল তাঁর প্রথম পেটেন্ট। কিন্তু টেসলার নতুন নতুন জিনিসে বিনিয়ােগকারীরা আগ্রহ পেতেন না। টেসলা হয়ে পড়লেন কপর্দকহীন।

একপর্যায়ে তাঁর পেটেন্টগুলােও হাতছাড়া হয়ে যায়। টাকার জন্য তিনি জিনিসপাতি ঠিক করে দেওয়ার চাকরি করে বেড়াতে লাগলেন, এমনকি দিনে দুই ডলারের বিনিময়ে গর্ত খোঁড়ার কাজও করলেন। ১৮৮৬ কি ১৮৮৭ সালের সেই শীতকালে তিনি ভাবছিলেন, ‘কী লাভ হলাে আমার এত পড়াশােনা করে?’

এসি কারেন্ট এবং রোটেটিং ম্যাগনেটিক ফিল্ডের ধারণা 
১৮৮৭ সালে টেসলা দুজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে মিলে একটা কোম্পানি। প্রতিষ্ঠা করলেন। প্রথমবারের মতাে সেই ল্যাবে টেসলা এসি কারেন্ট দিয়ে চলা ইন্ডাকশন মােটর চালান। আজকের ইলেকট্রিক দুনিয়ার সেই ল্যাবেই, টেসলার হাতে। এর আগপর্যন্ত ছিল ডিসির জয়জয়কার। রােটেটিং ম্যাগনেটিক ফিল্ডের ধারণাও টেসলা দেন প্রথম, সেই ১৮৮২ সালে। ১৮৮৮ সালে অলটারনেটিং কারেন্ট প্রদর্শন করেন টেসলা। IEEE প্রতিষ্ঠানের সবার সামনে দেখালেন তিনি। সবাই ব্যাপারটা দেখে অবাক হলাে, ভালােভাবে নিল এই প্রথম। এমনকি ৬০ হাজার ডলারের প্রস্তাবও পেলেন তিনি।

এডিসনের সঙ্গে এসি ও ডিসি কারেন্ট বিষয়ক বিরোধ
কিন্তু এতে নাকি এডিসনের মাথা গরম হয়ে গেল, টেসলার এসি কারেন্ট বাজার পেয়ে গেলে এডিসনের ডিসি কারেন্ট যে মার খেয়ে যাবে! এডিসন এসি কারেন্টের নাম দিয়েছিলন ‘ডেথ কারেন্ট’; তিনি স্থানীয় ছেলেদের জনপ্রতি ২৫ সেন্ট করে দিলেন জীবিত কুকুর আর বিড়াল এনে দেওয়ার জন্য। সেই কুকুর, বিড়াল এবং একটি হাতিকে পর্যন্ত জনসম্মুখে ‘টেসলার এসি কারেন্ট’ দিয়ে তড়িতায়িত করে মারেন এডিসন, সবাইকে বােঝানাের জন্য যে এসি কারেন্ট বিপজ্জনক।

মজার কান্ড ঘটিয়ে উচিত জবাব দিলেন এডিসনকে  
জবাবে এক মজার কাণ্ড করেছিলেন টেসলা। এসি কারেন্ট যে নিরাপদ, সেটা সবাইকে দেখানাের জন্য সবার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের শরীরের মধ্য দিয়ে আড়াই লাখ ভােল্টের এসি কারেন্ট প্রবাহিত করেছিলেন তিনি! তাঁর পুরাে শরীর বিদ্যুতের আলােয় ঝলমল করছিল। প্রতিটা কোষ থেকে ঠিকরে বেরুচ্ছিল আলাে। এ ঘটনার কথা জানা যায় নিউইয়র্ক ওয়ার্ল্ডের সাংবাদিক আর্থার ব্রিসবেনের লেখায়। সব মিলে অনেক চেষ্টা করেও এডিসন পারলেন না। ১৮৯২ সালের মাঝে নিজের কোম্পানির প্রধান পদটিও হারিয়ে ফেলেন তিনি।

অদৃশ্য তরঙ্গ তথা এক্স-রে নিয়ে কাজ 
১৮৯৪ সালে টেসলা কাজ শুরু করলেন অদৃশ্য তরঙ্গ নিয়ে। কিন্তু সেটির পেটেন্ট বা কিছুই নেননি। ১৮৯৫ সালে উইলিয়াম রঞ্জেন সেই অদৃশ্য তরঙ্গের নাম দেন এক্স-রে। তখন টেসলা বলেন, তিনি এটা নিয়ে কাজ করছিলেন। ১৮৯৫ সালে তাঁর ল্যাবের সবকিছু (প্রায় ৫০ হাজার ডলারের জিনিস) আগুনে পুড়ে শেষ হয়ে যায়। তাই তাঁর এক্স-রে-এর কোনাে কাজ তিনি দেখাতে পারেননি।

এক্স-রে নিয়ে টেসলার সতর্কবাণী 
আবার নতুন করে শুরু করলেন টেসলা। রঞ্জেন যখন এক্স-রে নিয়ে কাজ করেন, তখন মানুষ ভেবেছিল এক্স-রের বুঝি নিরাময়ী ক্ষমতা আছে। কিন্তু টেসলা বললেন, এই তরঙ্গ বিপজ্জনক। এটি যেন চিকিৎসাক্ষেত্রে ব্যবহার করা না হয় তখনাে। কিন্তু কে শােনে কার কথা! টেসলার এক্স-রে নিয়ে আগ্রহ শুনে এডিসন লেগে গেলেন এক্স-রে নিয়ে, একদম চিকিৎসাকাজেই!

তাঁর এক কর্মী ক্ল্যারেন্স ডালি এত বেশি এক্স-রেতে এক্সপােজড হন যে তাঁর হাত কেটে বাদই দিতে হয়েছিল। তাতেও লাভ হয়নি। ক্যানসারে মারা যান তিনি। তাছাড়া নিজেও নিজের ওপর এক্স-রে নিয়ে গবেষণা করেন এডিসন, চোখে অনেকবার এক্স-রে মারেন। প্রায় অন্ধই হয়ে গিয়েছিলেন সেজন্য। ১৯০৩ সালে এক্স-রে নিয়ে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, “এক্স-রে নিয়ে কোনো কথা বলবেন না আমার সঙ্গে।”

অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিসঅর্ডারে বিপর্যস্ত জীবন 
১৯১২ সালের দিকে ওসিডি’র (OCD- Obsessive Compulsive Disorder) লক্ষণ দেখা যায় তাঁর মধ্যে। এক প্রকার শুচিবায়ুগ্রস্ত হয়ে পড়েন তিনি। মানুষের সঙ্গে মোলাকাত করে হাত ধুয়ে ফেলতেন সঙ্গে সঙ্গে। খেতে বসার আগে ১৮টা রুমাল বিছিয়ে দিতেন প্লেটের তলায়। কোথাও গেলে গুনতে থাকতেন, কয় কদম এগুলেন। মেয়েদের কানের দুল দেখলে বিরক্ত হতেন। এছাড়া শব্দও তাঁকে কষ্ট দিত।

জীবনের রহস্যময় পরিসমাপ্তি 
জীবনের শেষ দিকে টেসলা কবুতরের প্রতি আসক্তি অনুভব করেন, একটা বিশেষ শাদা কবুতর, যে কবুতরকে তিনি মানুষের মতোই ভালোবাসতেন। খোলা জানালা দিয়ে কবুতরটি এক রাতে টেসলার হোটেল রুমে এসে ঢুকে পড়ে। টেসলার ভাষ্যে, “কবুতরটির চোখে ছিল শক্তিশালী আলোর রেখা। সত্যিকারের আলো, ঝলমলে, চোখ ধাঁধিয়ে দেবার মতো, আমার ল্যাবে যে আলো আমি তৈরি করেছি, তারচে তীব্র।” কবুতরটি তাঁর হাতের ওপরেই মারা যায়। সেই মুহূর্তেই টেসলার মনে হয়, তিনি তাঁর কাজ শেষ করেছেন।

১৯৪৩ সালে মারা যাওয়ার সময় টেসলার মাথায় ছিল বিপুল ঋণের বোঝা, যদিও তিনি ছিলেন পৃথিবীর সবচে গুরুত্বপূর্ণ বিজ্ঞানীদের একজন।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন